03/14/2025 হাসেম ফুডসে ‘অঙ্গার’ হওয়া মরদেহ নিয়ে স্বজনদের কান্না
স্টাফ রিপোর্টার
৫ আগস্ট ২০২১ ০৮:২৮
নিজস্ব প্রতিবেদক : আগুনে পুড়ে অঙ্গার হওয়া স্বজনদের লাশ গ্রহণের সময় আবারও শোকের মাতম উঠেছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গের সামনে। নারায়ণগঞ্জে হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৪৮ জনের মধ্যে শনাক্ত হওয়া ২৪ জনের মরদেহ গতকাল তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর কর হয়। খবর দিয়ে আনা হয়েছিল স্বজনদের। ২৮ দিন অপেক্ষার পর লাশ বুঝে নিতে এসে তাদের আর্তনাদে সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। কেউ দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে, কেউ মাটিতে বসে বিলাপ করছিলেন। আর লাশ বহনের জন্য অপেক্ষায় এক সারিতে দাঁড়িয়েছিল অ্যাম্বুল্যান্স।
দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যে মরদেহ হস্তান্তর করে সিআইডি। হস্তান্তরের সময় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রতি পরিবারের হাতে দাফন বাবদ ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলার সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জীবন কান্তি সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘৪৮টি মরদেহের মধ্যে এ পর্যন্ত ৪৫ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাকি তিনজনের পরিচয় নির্ণয়ের কাজ চলছে। বুধবার এসে ২৪ জনের মরদেহ নিয়ে যেতে আগের দিন তাদের পরিবারকে জানিয়ে দিই।’ তিনি জানান, পরিচয় পাওয়া বাকি মরদেহগুলো আগামী শনিবার সকালে ঢামেক মর্গ থেকে একইভাবে দেওয়া হবে।
গতকাল হস্তান্তর করা হয়েছে মো. আয়াত হোসেন, মো. নাঈম ইসলাম, নুসরাত জাহান টুকটুকি, হিমা আক্তার, মোসা. সাগরিকা সায়েলা, খাদেজা আক্তার, মোহাম্মদ আলী, তাকিয়া আক্তার, শাহানা আক্তার, মিতু আক্তার, জাহানারা, মোসা. ফারজানা, ফাতেমা আক্তার, মোসা. নাজমা খাতুন, ইসরাত জাহান তুলি, নাজমা বেগম, মোহাম্মদ রাশেদ, রাকিব হোসেন, ফিরোজা বেগম, তারেক জিয়া, রিপন মিয়া, শাহানা আক্তার, মো. মুন্না ও রিয়া আক্তারের লাশ।
সরেজমিনে মর্গের সামনে অবস্থান করে দেখা যায়, মরদেহ কফিন ভর্তি করার সঙ্গে সঙ্গেই ডাক দেওয়া হচ্ছে স্বজনদের। একে একে তাঁরা যাচ্ছেন লাশকাটা ঘরের সামনে। সেখানে ঢাকা জেলা প্রশাসন তাঁদের ২৫ হাজার টাকা করে দিয়ে মরদেহ বুঝিয়ে দিচ্ছে। এরপর অ্যাম্বুল্যান্সে উঠানোর পর লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন স্বজনরা। এ সময় নেত্রকোনার মোহাম্মদ আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২৫ দিনের বেশি মেয়ের মরদেহের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। সিআইডির ফোন পেয়েই ভোরে চলে আসি। মেয়েকে দেখে চিনতে পারিনি। তবে লাশটা নিয়ে, অন্তত তার শরীরটা মাটিচাপা দিয়ে শান্তি পাব, এটাই সান্ত্বনা।’
বড়দের সঙ্গে এসেছিল ছয় বছরের শিশু তাইয়্যেবাহ। তার বিশ্বাস, বোন আজ বাড়ি ফিরবে। মর্গের কলাপসিবল গেটের সামনে বসে ছিল সে। তার একপাশে বসা তার মা, আরেক পাশে বড় বোন। বোন তাকিয়ার কফিন দেখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে তাইয়্যেবাহ। তাকিয়ার আরেক বোন আর্জিনা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ছোট বোন তাকিয়া ও আমি একসঙ্গেই ওই কারখানায় কাজ করতাম। আমি গত জুনে কাজ ছেড়ে দিই। তাকিয়া ঈদের বোনাসের জন্য কাজ করে যায়। ঈদের পরপরই তারও কাজ ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল।’
মায়ের লাশ নিতে মর্গে আসা জাকিরের কান্না কোনোভাবেই থামছিল না, মা জাহানারা বেগমের মরদেহ কিশোরগঞ্জের মাতুয়াপাড়ায় নিয়ে যাওয়ার সময় কফিনের সামনে আহাজারি করে জাকির বলছিলেন, ‘আমার মা তো চলে গেল, আর তো পাব না। আমার মাকে ফিরিয়ে দেন কেউ।’
১৬ বছরের মুন্নার মরদেহ নিতে এসেছিলেন তার বাবা গিয়াসউদ্দিন। তিনি নিজেকে সামলাতে পারবেন না বলে তাঁর সঙ্গে আসেন মুন্নার ফুপা কুতুবউদ্দিন, ফুপু রোকসানা।
কারখানার কর্মচারী শাহীনুরের মরদেহ বুঝে নিয়েছে তার মা ও বোন তানিয়া, মোহাম্মদ আলীর মরদেহ নিয়েছেন তার বাবা শাহদাত খান। ১২ বছরের হাসনাঈনের মরদেহ নিয়ে যান তার মা নাজমা।